Friday 9 January 2015

ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ থাকা

ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ থাকা
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন বিপাক-জনিত রোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। টিকে থাকার তাগিদে মানুষকে বরাবরই বিভিন্ন রোগ ব্যাধির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নির্মূল করার পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত না হলেও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করে একজন সুস্থ মানুষের মত বেঁচে থাকা সম্ভব। অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অন্ধ্যত্ব, পঙ্গুত্ব, হৃদরোগ এমনকি কিডনীর রোগের মত দূরারোগ্য ব্যাধিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মৃত্যূর কারণও হতে পারে। তাই আসুন ডায়াবেটিসের প্রকৃতি সমন্ধে অবহিত হয়ে একে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল জেনে নেই এবং আর দশজন সুস্থ মানুষের মত স্বাভাবিক জীবনযাপনে সচেষ্ট হই।
ডায়াবেটিস কিভাবে হয়?
অগ্নাশয়ের বিটা সেল হতে ইনসুলিন নামক হরমন তৈরী হয়। এই ইনসুলিন হরমনের অভাব বা এটি অকার্যকর হলেই গ্লুকোজ রক্ত হতে দেহকোষে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে রক্তে গ্লকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, অর্থাৎ ডায়াবেটিস দেখা যায়। সাধারনত বংশগত কারন, ওজনাধিক্য, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা, অত্যাধিক মানসিক চাপ ইত্যাদি এর প্রধান কারণ।
লক্ষণ ও টাইপ
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার নামই ডায়াবেটিস। ঘন ঘন প্রশ্রাব হওয়া, অতিরিক্ত পানি পিপাসা, বেশী ক্ষুধা পাওয়া, যথেষ্ট খাওয়া স্বত্তেও ওজন কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও দূর্বল বোধ করা, ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া, খোশ-পাঁচড়া প্রভৃতি চর্মরোগ ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ এই দুই প্রকার ডায়াবেটিসের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাবই আমাদের দেশে বেশী। এছাড়াও গর্ভকালীন অবস্থায় এক ধরণের ডায়াবেটিস দেখা যায়, যাকে জি ডি এম বলা হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিনা বুঝার উপায়
ডায়াবেটিসের সুনিয়ন্ত্রিত অবস্থা বলতে বুঝায় খালি পেটে রক্তে চিনির পরিমাণ ৪.৪-৬.০ মিলি-মোল/লিটার এবং খাবারের পরে রক্তে চিনি ৬.১-৮.০ মিলি-মোল/লিটার এবং ৩ মাসে রক্তে চিনির গড়(HbA1c) ৭% এর নিচে এছাড়াও ওজন, রক্তের চর্বি, রক্তচাপ ইত্যাদি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হলো “Discipline is Life” অর্থাৎ “শৃঙ্খলাই জীবন”। এই শৃঙ্খলা বলতে বুঝায় খাবার ব্যায়াম এবং ঔষধ অবশ্যই সময় এবং পরিমাণ মত হওয়া। সকালে দুপুরে ও রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিমাণ মত সূষম খাবার এবং মধ্যদুপুরে ও বিকেলে হালকা খাবার খেতে হবে। রাতের খাবারের পর বেশী দেরিতে ঘুমাতে গেলে শোবার আগে হালকা কিছু খেয়ে নেয়া ভালো।
ডায়াবেটিস কেন বাড়ে?
  • প্রয়োজনের বেশি খেলে
  • দৈহিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করলে
  • প্রয়োজনের তুলনায় কম ইনসুলিন নিলে
  • ডায়াবেটিস ট্যাবলেট খেতে ভুলে গেলে বা না খেলে বা অনিয়মিত খেলে
  • কোন সংক্রামক বা প্রদাহজনিত রোগ হলে
  • মানষিক বিপর্যয় দেখা দিলে
  • অন্য কোন চিকিৎসার সময় ডায়াবেটিস চিকিৎসা বন্ধ রাখলে
ডায়াবেটিসে পথ্য
ডায়াবেটিস হলে চিনি, গুড়, আখের রস, খেজুরের রস, মধু ইত্যাদি এবং এগুলো দিয়ে তৈরী খাবার পরিত্যাগ করা উচিত। ভাত, রুটি, আলু, চিড়া, মুড়ি, খৈ, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি পরিমাণ অনুসারে খেতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শাক, পানশে সবজি যেমনঃ পেপে, লাউ, চালকুমড়া, পটল, চিচিঙ্গা, ঝিংগা, শশা, ক্ষিরা, মূলা, ওলকপি এছাড়া ফুলকপি, পাতাকপি, টমেটো, করল্লা, শাজনা, বিভিন্ন টক ফল যেমনঃ আমড়া, কামরাঙ্গা, কচি ডাবের পানি, অমলকি, জামরুল, লেবু এসব প্রতিদিনের খাদ্য-তালিকায় বেশী পরিমাণে রাখা উচিত। এছাড়া আলু, কাঁচাকলা, সিম, ঢেড়স, বরবটি, গাজর, কলার মোচা,কলার থোর, বিভিন্ন মিষ্টি ফল যেমনঃ আম, কলা, কাঁঠাল, আপেল, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি অবশ্যই পরিমাণ মত খাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রতিদিন একটি ছোট কলা বা একটি বড় কলার অর্ধেক বা একটি ছোট আপেল খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি স্বাদের জন্যে প্রচলিত চিনির পরিবর্তে এস্পার্টেম গ্রুপের চিনি ব্যাবহার করা যায়। এই জাতীয় চিনি বাজারে ক্যানডেরাল, ইকুয়্যাল ইত্যাদি ব্রান্ড নামে পাওয়া যায়।
ব্যায়াম
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে প্রতিদিন নিয়মমাফিক ব্যায়াম করা উচিত। বিকেল কিংবা স্বন্ধ্যার পরে ৪০-৫০ মিনিট হাঁটা যেতে পারে অথবা এর পরিবর্তে ঘরে বসে ট্রেডমিল ব্যবহার করা যায়। তবে বিশেষ শারীরিক সমস্যা থাকলে ব্যায়াম-এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
ডায়াবেটিসে ঔষধ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ঔষধ সময় ও পরিমাণ অনুসারে গ্রহণ করতে হবে। ইনসুলিন যাদের প্রয়োজন তাদের ইনসুলিন নেয়ার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি ডায়াবেটিক সেন্টারে এসে হাতে কলমে শিখে নেয়া উচিত। সহজলভ্য গ্লুকোমিটারের সাহায্যে এখন ঘরে বসে রক্তে চিনির মাত্রা জেনে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব।
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে ২.৫ মিলি মোলের নীচে নেমে গেলে শরীরে কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। খাবার খুব কম খেলে, ইনসুলিন নেয়ার পর খাবার খেতে ভুলে গেলে, মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করলে, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম করলে, ইনসুলিন নেয়ার পর খাবার গ্রহণে আধঘন্টার বেশী দেরী করলে এই সমস্যা হতে পারে। মাথা ঘোরা, বুক ধরফর করা, অস্থিরতা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ক্ষুধায় হাত পা কাঁপা ইত্যাদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। অনেক সময় রুগী অসংলগ্ন আচরণ করতে পারে, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার দেখা দিলে মাত্র ৪ চামচ চিনি গ্রহণ (যা কিনা স্বাভাবিক অবস্থায় ডায়াবেটিক রগীদের জন্য নিষিদ্ধ) করে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। চিনি না পাওয়া গেলে ১৫ গ্রাম শর্করা সমৃদ্ধ যে কোন খাবার যেমনঃ আধা গ্লাস ফলের রস, ৩টি সুগার-কিউব, ৩/৪টি লজেন্স, একটি রুটি বা ছয়টি ক্রেকার বিস্কিট খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন
ডায়াবেটিক রুগীদের পায়ের যত্ন করা অত্যন্ত জরুরী। এই বিষয়ক সাধারণ কিছু তথ্য না জানার কারণে বহু মানুষ প্রতিনিয়ত পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এই দুঃখ্যজনক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ের তলার অনুভুতি ঠিক আছে কিনা, পায়ের তলায় ফাটা, কাটা বা ক্ষত আছেকিনা তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। পায়ে ফাটা থাকলে তা পরিস্কার করে ভেসলিন বা পেট্রলিয়াম জেলি লাগাতে হবে। ওজু, গোসলের পরে পা এবং আঙ্গুলের ফাঁক ভালো করে মুছে শুকনা রাখতে হবে। নখ গোসলের পরে অথবা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর নেইল কাটার দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে কাটতে হবে। খুব ছোট করে নখ কাটা কিংবা নখের কোনা কাটা উচিত নয়। পায়ে কর্ন হলে নিজে না কেটে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। পরিস্কার মোজা এবং নরম আরামদায়ক সঠিক মাপের জুতা পরা উচিত। শক্ত কিংবা টাইট জুতা পড়লে পায়ে ফোস্কা পড়ে ক্ষতিকর ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।
দাঁতের যত্ন
ডায়াবেটিক রুগীদের দাঁতের যত্ন নেয়া একান্ত জরুরী। প্রতিদিন দুইবার দাঁত ব্রাস করা উচিত। দাঁতের ফাঁক পরিস্কার করতে কখনই ধাতব শলাকা বা ধারালো কোন বস্তু ব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনে সূতার সাহায্যে দাঁতের ফাঁকের খাদ্যকনা বের করা যেতে পারে। পান, জর্দা, সিগারেট সহ তামাক জাতীয় সকল কিছু বর্জন একান্তই বাঞ্ছনীয়।
ডায়াবেটিস থাকলেও একে নিয়ন্ত্রণ করে চললে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ না করে চললে নানাবিধ স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা দেখা দেয়। যেমনঃ হাইপোগ্লাইসেমিয়া, রেটিনোপ্যাথি, নেপ্রপ্যাথি, নিওরোপ্যাথি, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে  রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা, প্যারিফেরাল নিওরোপ্যাথি সহ নানা ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে হলে ডায়াবেটিস অবশ্যই সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সঠিক তথ্যজ্ঞান, সচেতণতা এবং নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বণে একজন ডায়াবেটিক রুগী আর দশজনের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

............................................
............................................
ফিজিওথেরাপি সম্পর্কিত যে কোন সেবার জন্য যোগাযোগ করুন ... 01977691052
............................................
সেবা সমূহ
*কোমর ব্যথা
*ঘাড় ব্যথা
*হাটু ব্যথা
*বাত ব্যথা
*মুখ বেকে যাওয়া
*প্যারালাইসিস চিকিৎসা কেন্দ্র
Address

Plot-19; Road-113/A; Gulshan-2; Dhaka; Bangladesh,Cell-01977691052


No comments:

Post a Comment