Friday 9 January 2015

হার্ট এটাকের ১৩টি লক্ষণ


হার্ট এটাকের ১৩টি লক্ষণ



যে হারে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে যে কোনও মানুষ যখন-তখন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই হার্ট অ্যাটাকের ১৩টি চিহ্ন জানা থাকলে কে বলতে পারে, ​হয়তো এর দৌলতেই আপনি নিজের এবং অন্যের জীবন বাঁচাতে পারবেন।
হার্ট অ্যাটাকের ১৩টি চিহ্ন
১. উপসর্গ বনাম চিহ্ন– হার্ট অ্যান্ড স্ট্রোক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র মিশন স্পেশালিস্ট ম্যাথু মেয়র জানিয়েছেন, সংস্থার মতে ‘চিহ্ন’ আর ‘লক্ষণ’ শব্দ দুটো এক নয়। ‘উপসর্গ’ বললে শারীরিক সমস্যার কথা বোঝায়। যা ইতিমধ্যেই শরীরে দেখা দিয়েছে। চিহ্ন দেখা দিলেই উপসর্গ দেখা দেবে।
২. মেয়রের মতে, এমন ৬টি চিহ্ন আছে যেগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হার্ট অ্যাটাক হলে দেখা দেবেই। সেগুলো কী? বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি, শরীরের উপরিভাগের অন্যান্য প্রত্যঙ্গে অস্বস্তি, ঘাম, নিঃশ্বাসে কষ্ট, বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা বা আচমকা মাথা হালকা হয়ে যাওয়া।
৩. অনেকেই মনে করেন, বুকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক। এটা একেবারেই ভুল। হার্ট অ্যাটাকের সময় বুকে তীব্র ব্যথা আপনার নাও হতে পারে। অনেকের বুকে শুধু চাপ ধরা অনুভূতি হয়। কারও বুক-জ্বালা করতে পারে বা ভারী ভাব লাগতে পারে। আবার কিছু জন ব্যথা নয়, শুধুই হালকা অস্বস্তি বোধ করেন– হার্ট অ্যাটাকের যেটা ‘কমন’ চিহ্ন।
৪. হার্ট অ্যাটাকের আরেকটা জানা চিহ্ন হল বুকের সঙ্গে বাঁ-হাতে ব্যথা করা। এটা একটা অংশ মাত্র। এছাড়াও ঘাড়, চোয়াল, কাঁধ, পিঠের উপরিভাগেও অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন মেয়র।
৫. মাথা ঘোরা বা বমি ভাব অন্য রোগেও হয়। তাই এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে অপেক্ষা না করে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিন।
৬. হার্ট অ্যাটাক হলে ছবিতে যেমন দেখেন ঠিক তেমনটা আপনার সঙ্গে হবে ভেবে থাকলে ভুল ভাবছেন।
৭. অস্বস্তি বনাম ব্যথা– মেয়র বলছেন, হৃদরোগে ব্যথার বদলে অস্বস্তিও হতে পারে। তীব্র ব্যথা ছাড়াও বেদনা, অবশ ভাব, চাপ অনুভব করা, মোচড় দেওয়া, জ্বালা-ভাব ইত্যাদি হতে পারে। মোট কথা আপনি শরীরে কিছু না কিছু অস্বস্তি অনুভব করবেন।
৮. মেয়রের মতে, হার্ট অ্যাটাকে পুরুষের থেকে নারীই বেশি আক্রান্ত হন এবং মারা যান। তিনি সমীক্ষায় দেখেছেন, মেয়েদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার আগে হৃদরোগের একাধিক লক্ষণ দেখা যায়। বেশির ভাগই বলেন, ব্যথা নয়, তাঁরা বুকে অস্বস্তি অনুভব করেছেন। এর পরেও শুধু পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখতে গিয়ে তাঁরা কারও সাহায্য না চেয়ে ব্যাপারটা স্রেফ এড়িয়ে যান।
৯. হার্ট অ্যাটাকের চিহ্ন যে আচমকা দেখা দেবে এমনটা নয়। হঠাত্‍ তীব্র ব্যথার বদলে অনেকটা সময় ধরে বুকে অস্বস্তিও হতে পারে। দুটোর একটা হলেই চিকিত্‍সকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যিক।
১০. হৃদরোগ হওয়ার আগে থেকেই অনেক সময় তার চিহ্ন ফুটে ওঠে। যেমন, শরীর-চর্চার সময় রোজই বুকে চাপ ধরা বা শ্বাস কষ্ট আর্টারি ব্লকেজ-র পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিলে হৃদরোগ থেকে রক্ষা পাবেন আপনি।
১১. লাইফস্টাইলও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। যেমন, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, পরিবারে একাধিক সদস্য ৫৫ বছরের আগে এই রোগে ভুগলে, নিজের হৃদরোগের সমস্যা থাকলে এবং বয়সজনিত কারণে আপনি এই সমস্যায় পড়তে পারেন।
১২. এই রোগের ক্ষেত্রে ‘সময়’ একটা বড়ো ফ্যাক্টর। সময়ে চিকিত্‍সা শুরু করলে মৃত্যুও এড়ানো সম্ভব। তাই ওপরে বলা ৬টি চিহ্নের এক বা একের বেশি শরীরে দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে চলে যান। কারণ, হার্ট অ্যাটাক হলে শরীরে রক্ত সরবরাহ ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে থাকে। একাধিক পেশী কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে। তখন রোগীকে বাঁচানো কষ্টকর। মেয়র জানিয়েছেন, হৃদ কোষ একবার নষ্ট হলে আর তা নতুন করে তৈরি হয় না। তাই যত দেরি করবেন, তত বেশি টিস্যু নষ্ট হতে থাকবে। আর একবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া মানেই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কেও অক্সিজেনের অভাব ঘটে। আপনি তখন জীবন-মৃত্যুর সীমারেখায় দাঁড়িয়ে।
১৩. শেষ কথা, এতক্ষণ বলা ৬টি চিহ্নের এক বা একটির বেশি দেখা দিলে স্থানীয় ইমার্জেন্সি নম্বরে যোগাযোগ করে কী করবেন জেনে নিন। এবং বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি– যা-ই হোক না কেন, দ্রুত চিকিত্‍সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

No comments:

Post a Comment