Friday 2 January 2015

ভারতের ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে--ভারত ভিসার ই-টোকেন

ভারতের ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে

ভারত ভিসার ই-টোকেন                            

http://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/


ভারতের ভিসার জন্য ই-টোকেন এখন সোনার হরিণ। অনলাইনে ভিসার আবেদন পূরণ করে সাক্ষাৎকারের জন্য ই-টোকেন পাওয়া সাধারণের জন্য অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় অনলাইন ভিসা আবেদন পেজটির 'ই-টোকেন' বিশেষ প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় 'লক্ড' করা হচ্ছে। এর ফলে একশ্রেণীর দালাল ছাড়া সাধারণ মানুষ ই-টোকেন পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা জানান, দালালদের টাকা দিলে তারা খুব সহজেই ই-টোকেন পেয়ে যান। সাধারণ কেউ ঢুকতে গেলে বারবার 'সার্ভার ব্যস্ত' লেখা ওঠে। হয় এক ধরনের বটনেট ব্যবহার করে অনলাইন ভিসা পেজটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে অথবা এই অনলাইন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরাই সাইটটি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।            
অনলাইনে এবং ফেসবুকে অসংখ্য পেজ খুলে ভারতীয় ভিসা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। ভিসা নিয়ে প্রতারণার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ চিঠির পর অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্তও শুরু করেছে। এর মধ্যে ঘটনার সঙ্গে শতাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে প্রমাণও মিলেছে। অনলাইনে ই-টোকেন নিয়ন্ত্রণের রহস্য উদ্ঘাটনে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য কর্মকর্তা ও মুখপাত্র সুজিৎ ঘোষ একটি মোবাইল এসএমএস পাঠিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের অবস্থান জানান। তাতে বলা হয়, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াই ভারতের ভিসা প্রক্রিয়ার একমাত্র বৈধ এবং ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলোও এই ব্যাংকের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। এর বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিজেদের এজেন্ট দাবি করে ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিলে অবশ্যই সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকেও অনুরোধ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রতারণা যেভাবে: ভিসাপ্রার্থীরা অনলাইনে ফরম পূরণ করলে ওয়েবসাইট থেকে একটি 'ই-টোকেন' ও সাক্ষাৎকারের তারিখ পাওয়া যায়। নির্ধারিত তারিখে ওই টোকেন ও পূরণ করা ফরমের প্রিন্টেড কপিসহ আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের জন্য দূতাবাসে উপস্থিত থাকতে হয়। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ভারতীয় ভিসা আবেদনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তিনি অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণের পর কোনোভাবেই ই-টোকেন পাচ্ছিলেন না।
পরে তিনি পরিচিত একজনের পরামর্শ অনুযায়ী গুলশান ১ নম্বরে ভারতীয় ভিসার দালালদের দোকানে যান। এই মোড়ে ডিসিসি মার্কেটের উল্টোদিকে কয়েক ডজন দালালের দোকান আছে। সেখানে দালালকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার পর তিনি ফরম পূরণ করে ই-টোকেন পাইয়ে দেন। এর পর তিনি নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষাৎকারের জন্য যান।
শুধু গুলশান ১ নম্বর নয়, অনলাইন-ফেসবুকে অসংখ্য পেজ খোলা হয়েছে ভারতীয় ভিসা সহায়তা কেন্দ্র নামে। এসব পেজে ফোন নম্বরসহ বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। অনলাইন মার্কেট প্লেস বিক্রয় ডটকমেও দেখা গেছে এ ধরনের বিজ্ঞাপন।
সঙ্গে ফেসবুক পেজের লিঙ্ক। বিক্রয় ডটকম, ধানমণ্ডি থেকে বাঁধন নামের একজনের দেওয়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ই-টোকেন অ্যাপয়নমেন্ট জরুরি হলে দুই হাজার টাকা, স্বাভাবিক হলে এক হাজার ৫০০ টাকা। তার দেওয়া ০১৯৫৪৮৭৯৫১৫ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধানমণ্ডি গিয়ে তাকে কাগজপত্র দিয়ে আসতে বলেন। একদিনের মধ্যে তিনি সাক্ষাৎকারসহ ই-টোকেনের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কীভাবে তিনি এটি করবেন- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
ভিসা পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার এ ঘটনা তদন্ত করছেন অর্গানাইজড ক্রাইমের ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান। সমকালের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বেশির ভাগ প্রতারকই ফেসবুকে পেজ খুলে ভারতীয় ভিসা পেতে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করছে। প্রযুক্তিগত কারণে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের সহজে শনাক্ত করা যায় না। ওই সব ফেসবুক পেজের কয়েকটিতে মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে। ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে অধিকাংশ মোবাইল নম্বরেরই রেজিস্ট্রেশন নেই। দু-একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া গেলেও তা ভুয়া।
মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে ভয়াবহ একটি তথ্য পাওয়া গেছে। একটি চক্র অত্যাধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যে সফটওয়্যার দিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনের অনলাইনে প্রবেশ করলে আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। এ চক্রটি বাংলাদেশ থেকেই এ সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে এখনও তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। পাশাপাশি এর সঙ্গে কারা জড়িত, তাও পাওয়া যায়নি। তবে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সেই বিশেষ সফটওয়্যার আসলে কী?: অনলাইন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন সাবির সমকালকে বলেন, ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রধানত ব্যবহার হয় বটনেট। এটি এক ধরনের হ্যাকিং। বটনেট নামে একটি স্মাওয়্যার ব্যবহার করে যে কোনো ওয়েবসাইটে হ্যাকার তার নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে। ফলে হ্যাকার যখন বটনেটসহ ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, তখন সেখানে অন্যরা ঢুকতে পারে না। অনলাইন পরিচালনাকারীরা 'সাইট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর' ব্যবহার করে অনলাইনে প্রবেশ এবং বিশেষ ট্যাব বা সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তিনি বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনের অনলাইন যারা পরিচালনা করছেন, তাদের কেউ এ সাইট উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন কি-না, সেটা আগে তদন্ত করে দেখা উচিত।
তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা: সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন এবং এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে সিআইডির সাইবার ক্রাইম স্কোয়াড রাজধানীর খিলগাঁও থেকে একজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া শফিকুল ইসলাম বনি (২৩) গোপলগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চাপ্তা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে 'ইন্ডিয়ান ভিসা সাপোর্ট' নামে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ভারত ভিসার ই-টোকেন 

                        

http://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/

No comments:

Post a Comment