Friday 9 January 2015

আসুন গেঁটে বাত সম্পর্কে জানি

Gouty Arthritis

আসুন গেঁটে বাত সম্পর্কে জানি
আমাদের দেশে বাতের ব্যাথায় শয্যাশায়ী ও কর্ম ক্ষমতাহীন হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা কম নয়। পেশী ও অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা হওয়াকে বাত বলে। গাউট (gout) বা গেঁটে বাত এমন এক ধরণের রোগ, যার উদ্ভব হয় মেটাবলিজমের বিশৃংখ্যলতা থেকে। গাউট ল্যাতিন শব্দ gutta থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো a drop যা এখানে অল্প অল্প করে প্রচুর পরিমাণে ইউরেট পুঞ্জিভূত হওয়া অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
দেহে পিউরিন মেটাবলিজমের বিঘ্ন থেকে এরকম বাত হয়। পিউরিন বিপাক থেকে ইউরিক এসিড প্রস্তুত হয় যা বর্জ্য হিসাবে রক্তে আসে এবং সেখান থেকে প্রস্রাব দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই বাতে আক্রান্ত রুগীর রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশী থাকে। এই ইউরিক এসিডের লবণ অর্থাৎ ইউরেট নরম অস্থি, অস্থিসন্ধি ও তার আশেপাশে পুঞ্জিভূত হয়ে জমে থাকে এবং এর জন্য ফোলা, ব্যাথা এবং, অস্থিবিকৃতি দেখা যায়। এই ব্যাথা হঠাৎ করে খুব তীব্র হয় এবং কিছুদিন পর সাময়িক ভাবে বা সম্পূর্ণ ভাবে চলে যেতে পারে।
একবার পরিত্রাণের পর হঠাৎ করে এই যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথার পূনরাবৃতি হতে পারে। এর লক্ষণ অনেকটা আর্থাইটিসের মত তবে বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ফুলে লাল হয়ে যায় এবং তীব্র ব্যাথা হয়। এছাড়া পায়ের এঙ্কেল, গোড়ালি, হাঁটু, হাতের কবজি আঙ্গুল কনুই এবং মেরুদন্ডে গাউটের আক্রমণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বর আসতে পারে।
প্রাথমিক গাউট সাধারণত পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায় এবং রজঃক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলাদের মধ্যে এর তীব্রতা বেশী দেখা দেয়। এছাড়াও স্থুলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত শূন্যতা, বৃক্করোগ থেকেও গাউট হতে পারে। রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের ঔষধের ব্যবহার রয়েছে।
ওজন বেশী থাকলে অবশ্যই তা কমাতে হবে এবং অবশ্যই পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করতে হবে গরু ও খাসীর মাংস, কলিজা, মগজ, মাছের ডিম, বৃক্ক, সামদ্রিক মাছ যেমনঃ ম্যাকারেল, হেরিং ইত্যাদি পিউরিন সমৃদ্ধ খাদ্য সম্পূর্ণ পরিহার করে চলা উচিৎ। উদ্ভিজ্জ খাদ্যের মধ্যে সব রকম ডাল, বীজ জাতীয় খাবার যেমন সীমের বিচি, মটরশুটি, বেগুন, ফুলকপি, পালং শাক ও মাশরুম এবং চিংড়ি মধ্যম পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যথাসম্ভব পরিহার করে চলা উচিৎ।
সবুজ শাকসব্জী, টমেটো, গাজর, ফল, দুধ, ডিম, সরু ও মসৃণ চালের ভাত, নুডুলস ইত্যাদি সীমিত পিউরিন যুক্ত খাবার যা প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। যখন তীব্র বাতের তীব্র আক্রমণ হয় তখন কয়েকদিন পিউরিন সমৃদ্ধ খাদ্য ও স্নেহজাতীয় পদার্থ সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। খাদ্যে উপস্থিত চর্বি বা তেল দেহের পিউরিন নির্গমণে বাঁধা দেয়, সুতরাং খাদ্য সবসময় কম স্নেহজাতীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ সময় প্রচূর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে প্রস্রাবের মাধ্যমে ইউরিক এসিড বেরিয়ে আসে এবং রুগী আরামবোধ করে। এলকোহল সেবনেও গাউটের আক্রমণ হতে পারে, সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
বাতের ব্যাথা কমে গেলে ভারসাম্য রক্ষার্থে অল্প অল্প করে সূষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং সীমিত পরিমাণে পিউরিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment