Saturday 17 January 2015

ব্যায়াম না করা ধূমপানের মতোই মারাত্মক

ব্যায়াম না করা ধূমপানের মতোই মারাত্মক


ল্যানসেটসাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে প্রতিবছর যত অকালমৃত্যু ঘটে, সেগুলোর প্রতি ১০টির মধ্যে একটি হয় ব্যায়াম না করার কারণে। এই পরিসংখ্যান ধূমপানের প্রভাবে অকালমৃত্যুর পরিসংখ্যানের সমান.
কাউকে ধূমপান করতে দেখলে আপনি হয়তো প্রশ্ন করেন, ‘নিজের শরীরের মারাত্মক ক্ষতির কথা জেনেও কেন এই বাজে অভ্যাস ধরে রেখেছেন?’ আবার কেউ শরীরচর্চা করে না শুনলে কি আপনি একই রকমের প্রতিক্রিয়া দেখান? কিন্তু আসলে আপনার সেটাই করা উচিত। কারণ, ব্যায়াম না করা ধূমপানের মতোই বিপজ্জনক।
নিয়মিত ব্যায়াম না করার পরিণাম ধূমপানজনিত শারীরিক ক্ষতির সমান—এ কথা অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি। ধূমপান এড়িয়ে চলার (বা আসক্তি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা) ব্যাপারে আমরা যেমন সচেতন, শরীরচর্চার ব্যাপারেও একই রকমের মনোযোগ ও গুরুত্ব জরুরি। ধূমপান যেমন বিষপানের সমতুল্য, তেমনি আলসেমি বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাও আমাদের তিলে তিলে নিঃশেষ করে। গড়পড়তা হিসাবে, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করেন না। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার পরিণাম এখন স্থূলতার পরিণামের চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয়।
শরীরচর্চার উপকারিতা অসংখ্য এবং সন্দেহাতীত। হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, স্তন ও কোলন ক্যানসার, স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া, বিষণ্নতা এবং আরও অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত ব্যায়াম করার জুড়ি নেই। শরীরচর্চায় সুস্থ জীবন এবং দীর্ঘায়ু পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
কিন্তু শারীরিক ব্যায়ামে কী এমন আছে? হৃদ্রোগের কথাই ধরা যাক। শারীরিক উদ্দীপনার (ইনফ্লেমেশেন) সঙ্গে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে। শরীরচর্চায় এ ধরনের উদ্দীপনার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ তৈরি হয়। যখন আপনি নড়াচড়া করেন, মাংসপেশিগুলো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। আর প্রতিবার যখন আপনি ঘাম ঝরানোর ব্যায়াম করেন, রক্তের শর্করা, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডগুলোর মাত্রার উন্নতি ঘটে। কিন্তু অলস বসে থাকলে এসব উপাদান বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।
অল্প শারীরিক ব্যায়ামেও অনেক সুফল পাওয়া যায়। এমনকি প্রতিদিন পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটে অফিসে গেলেও স্বাস্থ্যের কিছু উপকার হয়। এভাবে শুরু করে আস্তে আস্তে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে।
যদি ব্যায়াম করেও আপনার ওজন না কমে, নিরাশ হবেন না। চোখে না পড়লেও ব্যায়াম থেকে শরীর অনেকভাবে উপকৃত হয়। যদি আপনি স্থূল হয়েও রোগমুক্ত থাকেন, শরীরচর্চায় আপনার সুস্থতার স্থায়িত্ব বাড়বে। ফলে স্বাভাবিক ওজনের যেকোনো মানুষের চেয়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
আপনার কি মনে হয়, ব্যায়াম করার বয়স পেরিয়ে এসেছেন? এ রকম ধারণা বাদ দিন। শরীরচর্চার কোনো বয়সসীমা নেই। ৮০ বছর বয়স পেরোনোর পরও শারীরিক সক্রিয়তার সুফল পাওয়া যায়। ব্যায়াম করার লক্ষ্য দীর্ঘায়ু অর্জন করা নয়, বরং ভালো থাকা এবং সুখী ও সুন্দর জীবন যাপন করা।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এখন সারা বিশ্বেই জীবনযাত্রায় এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ল্যানসেটসাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে প্রতিবছর যত অকালমৃত্যু ঘটে, সেগুলোর প্রতি ১০টির মধ্যে একটি হয় ব্যায়াম না করার কারণে। এই পরিসংখ্যান ধূমপানের প্রভাবে অকালমৃত্যুর পরিসংখ্যানের সমান। বিশ্বজুড়ে ২০০৮ সালে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। তাঁদের অধিকাংশই হৃদ্রোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, স্তন ক্যানসার এবং কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ১০ শতাংশ কমাতে পারলে বছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। আর ২৫ শতাংশ কমাতে পারলে বাঁচানো যাবে ১৩ লাখ মানুষকে।


No comments:

Post a Comment