Saturday 3 January 2015

দেশে বেশি মারা যাচ্ছে স্ট্রোকে

মৃত্যুর কারণে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে বাংলাদেশে। প্রভাবশালী চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট বলছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের শীর্ষে আছে স্ট্রোক। গত ২৩ বছরে ডায়রিয়ায় মৃত্যু কমেছে ৯১ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগের ধরন ও মৃত্যুর কারণে এই পরিবর্তন ঘটেছে। 


গতকাল বৃহস্পতিবার ল্যানসেট-এ ছাপা প্রবন্ধে ১৮৮টি দেশের মৃত্যুর কারণ-সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণে ১৯৯০ ও ২০১৩ সালের তথ্যের তুলনা আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশে মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণ: স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া (এক লাখ ৭৮ হাজার মারা যায়), স্কিমিক হার্ট ডিজিজ বা হৃদ্রোগ (এক লাখ ছয় হাজার মারা যায়), ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমুনারি ডিজিজ বা ফুসফুসের নালি সরু হয়ে যাওয়া (৪৩ হাজার), নিউমোনিয়া (৩৩ হাজার), ইন্টারেসটাইসিয়াল লাং ডিজিজ বা ফুসফুসের টিসু মোটা হওয়া (৩০ হাজার), ডায়াবেটিস (২৯ হাজার), নবজাতকের মস্তিষ্কে সংক্রমণ (২৮ হাজার), হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ বা উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদ্রোগ (২৮ হাজার), পানিতে ডোবা (২২ হাজার) এবং যকৃতের ক্যানসার (২০ হাজার মারা যায়)। 



১৯৯০ সালের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলো ছিল ভিন্ন। এখন যত মানুষ স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে, প্রায় একই সংখ্যায় মানুষ তখন মারা যেত ডায়রিয়ায় (এক লাখ ৭৯ হাজার)। দ্বিতীয় স্থানে ছিল নবজাতকের জন্মকালীন জটিলতা (৯২ হাজার)। নিউমোনিয়া তখন ছিল তৃতীয় স্থানে (৮৩ হাজার)। এখন এক নম্বরে থাকা স্ট্রোক তখন ছিল তালিকার চার নম্বরে (৫৭ হাজার)। তালিকায় থাকা অন্য কারণগুলো ছিল: পানিতে ডোবা (৫৪ হাজার), ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমুনারি ডিজিজ (৫০ হাজার), নিওনেটাল এনকেফালাইটিস (৩৬ হাজার), যক্ষ্মা (৩৬ হাজার), নবজাতকের অন্যান্য রোগ (৩৪ হাজার) এবং অপুষ্টি (৩০ হাজার)। 


এই পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংক্রামক ব্যাধিও (ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ইত্যাদি) বাড়ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্রুত নগরায়ণ ও জীবনযাপনে পরিবর্তন হওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। 


যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভর্সিটির ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ১৮৮ দেশের রোগ ও মৃত্যুর এই তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এই বিশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সহযোগী বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ। বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত ১৮৮টি দেশের জাতীয়ভাবে প্রকাশিত তথ্য গাণিতিক মডেলে সমন্বয় করা হয়েছে। এরপর পরিসংখ্যানের সূত্র ধরে উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 


এই পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলিয়া নাহিদ বলেন, রোগের কারণে মৃত্যু পরিস্থিতির সাধারণ পরিসংখ্যান এখন হাতে পাওয়া গেছে। আগে ছিল না। পৃথিবীর কোথায় কোন রোগে বেশি মৃত্যু হচ্ছে, তা এখন জানা যাচ্ছে। এই তথ্য নীতিনির্ধারকেরা ব্যবহার করতে পারবেন। অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা এখন সহজ হবে। 


এই গবেষণায় পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর প্রধান ১০টি কারণের তালিকা করা হয়েছে। এর শীর্ষে আছে স্কিমিক হার্ট ডিজিজ। ১৯৯০ সালে এটাই ছিল মৃত্যুর প্রধান কারণ। এর পরে ছিল স্ট্রোক, এখনো তাই আছে। বর্তমানে তালিকায় থাকা অন্য কারণগুলো হচ্ছে: ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমুনারি ডিজিজ, নিউমোনিয়া, আলঝেইমার ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার, সড়ক দুর্ঘটনা, এইচআইভি/এইডস, ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা। 


বাংলাদেশের ১৯৯০ ও ২০১৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হৃদ্রোগে ৪০০ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ২০০ শতাংশ, স্ট্রোকে ২০০ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। অন্যদিকে ডায়রিয়ায় ৯১ শতাংশ ও নবজাতকের জন্মজটিলতায় ৭৯ শতাংশ মৃত্যু কমেছে। 
গবেষকেরা বলছেন, একই রোগে দেশভেদে মৃত্যুর সংখ্যায় ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। এর কারণ মূলত স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য। এই বৈষম্য একটি আবার একটি দেশের মধ্যেও আছে।

No comments:

Post a Comment