Tuesday 13 January 2015

জীবন্ত খাবার বনাম মৃত খাবার

জীবন্ত খাবার বনাম মৃত খাবার



আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মহামানব প্রভূ যিশু তার অনূসারীদের বলেছিলেন তোমরা আহারের খাদ্যদ্রব্যকে রান্না করে মেরে ফেল না। রান্না করলে খাদ্যের প্রাণশক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সবুজ পাতার রস এবং শাক সবজি মানুষের জন্য আদর্শ খাদ্যপাদান এবং গম ঘাসের রস সর্বউত্তম।
আজকের পৃথিবীতে মানুষ শত শত জানা এবং অজানা রোগের ভয়াল থাবায় আতংঙ্কিত এবং দিশেহারা। এই বাংলাদেশে আজ থেকে ৪০-৫০ বছর পূর্বে যে কেন শহরে ঔষধের দোকান খুজে বের করতে কষ্ট হত কিন্তু বর্তমানে অলিতে গলিতে পর্যন্ত ঔষধের দোকান দেখা যায়। প্রত্যেক শহরে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর ছড়াছড়ি। হোমিওপ্যাথি, কবিরাজী, ইউনানি চিকিৎসার প্রসার ঘটেছে চোখে পড়ার মত। এছাড়া হাটে বাজারে, ট্রেনে টোটকা ওষুধ, স্বপ্নে পাওয়া নানা ধরনের দাওয়াই বিক্রেতা হকারদের চিৎকারে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। তারপরও মানুষ সুস্থ্য থাকার নিশ্চয়তা পায় নাই বা পাচ্ছে না। এই ব্যাপক এবং গণ অসুস্থতার নানাবিধ অসুস্থতার কারণের মধ্যে প্রধান কারণ আমাদের আহায্য খাদ্য উপাদানের প্রায় সবটাই রান্না করা অর্থাৎ মৃত খাবার। শুনতে অবাক লাগবে, খাদ্য আবার মৃত হয় কি করে! বাসি পচা হতে পারে। হাজার বছর পূর্বে যিশু যে কথা বলেছিলেন রান্না করা খাবার মৃত খাবার গবেষনায় দেখা গেছে রান্নাকরা খাবারের প্রতি পুরোপুরি নির্ভরশীল হলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এর ঘাটতি হবেই এবং শরীরের মেটাবালসম (বিপাকীয়) কার্যক্রম বিঘিœত হয়ে প্রথমে পেটের পীড়া এরপর পর্যায়ক্রমে নানা রোগের উৎপত্তি হবে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আমিষ মানুষ কাচা খেতো। বাবা আদম এবং ইভ কখনই রান্না করা খাবার খায়নি। তখন থেকে আগুনের আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে মানুষ কাচা ফলমূল, শাকপাতা, ইত্যাদি খেত এবং উদ্দাম উচ্ছল স্বাস্থ্য নিয়ে বনে জঙ্গলে হিংস্র পশুর আক্রমন প্রতিহত করে বাস করত। 
আগুনের আবিষ্কারের সাথে মানুষের জীবন বদলাতে শুরু করল এবং প্রথমে আগুন ঝলসিয়ে পরে রান্না করতে আরম্ভ করলো। বর্তমানে রান্না একটা শিল্প। টেলিভিশনের প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে প্রতিদিন রান্না শেখানোর পর্ব থাকে এছাড়া চায়নিজ, কোরিয়ান, ইন্ডিয়ান, কনটিনেন্টাল কত ধরনের রান্না শেখানোর প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আজকের পৃথিবীতে সুসভ্য মানুষ অ-রান্না খাবার অসভ্যতার লক্ষণ বলে মনে করে এবং তারা কল্পনাও করতে পারে না তাদের সমস্ত পূর্ব পুরুষেরা কেবলমাত্র কাচা খাদ্য (ফল, মূল, লতা, পাতা) খেতো আর তাদের কোন বিস্বাদ লাগতো না, বমি হতো না।
আজকে সময় এসেছে প্রতিদিনের খাবারে মৃত এবং জীবন্ত খাদ্য উপাদানগুলি বিভাজন করা যেমন -  
জীবন্ত খাবার - যে কোন খাবারই হোক না কেন হতে হবে তাজা টাটকা যথা ফল, অঙ্কুরিত শস্য, অপ্রক্রিয়াজাত মধু, পানিতে ভেজান বীজ এবং শাক-সবজি।
মৃত খাবার - রান্না করা যে কোন খাদ্যদ্রব্য, পাস্তুরাইজ করা তরল খাদ্য উপাদান, মাইক্রোওভেনে গরম করা অথবা রান্না করা খাবার, প্রক্রিয়াজাতকরণ অথবা অপমিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য যেমন বার্গার, চিপস, নুডুলস, টিনের কৌটায়, বোতলে প্রক্রিয়াজাত যে কোন খাদ্য, বেকারীর সমস্ত খাদ্য, কনডেনস মিল্ক, পাউরুটি ইত্যাদি। 
পৃথিবীতে লক্ষ কোটি বিভিন্ন প্রজাতীর জীবন্ত প্রাণী, জীব অনুজীব আকাশে বাতাসে, পানিতে, গভীর সমুদ্রে বসবাস করে। একমাত্র মানুষ ছাড়া সমস্ত জীবন্ত প্রজাতী নির্ধারিত প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে। আমরা বুদ্ধিমান মানুষ খাদ্যদ্রব্যকে রান্না করে নানা ভাবে মিশ্রিত করে প্রাকৃতিক পুষ্টি এবং বৈদ্যুতিক প্রাণসত্তাকে বিনষ্ট বা ধ্বংস করে আহার করি।
মানুষের নির্ধারিত প্রাকৃতিক খাবার রান্না করলে অথবা আগুনে তিন মিনিট ৮০ ডিগ্রি তাপে রাখলে উক্ত খাবারের শতভাগ এনজাইম ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় সব ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। অনেকক্ষন সিদ্ধ করলে আমিষ এবং তেলের রাসায়নিক গঠন বদল হয়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এক পদার্থে পরিনত হয়।
খাদ্যের আস ভেঙ্গেচুরে অপ্রয়োজনীয় পদার্থে পরিণত হয় ফলে খাদ্যদ্রব্য গুলি অনেক সময় ধরে ক্ষুদ্রান্তে অবস্থান করে এবং বদহজম হয়ে শরীরে টক্সিন সঞ্চিত হতে সাহায্য করে। জীবন্ত খাবারের প্রতিটি কোষ জীবন্ত থাকে। যদি জীবন্ত খাবার খাওয়া হয় তবে খাবারে প্রাণের স্পন্দন শরীরে গ্রহণ করে উচ্ছলতা ও উদ্দমতা বাড়িয়ে দেবে। পক্ষান্তরে মৃত খাবার ক্যালোরী বা তাপশক্তি এবং অল্প পরিমান ভিটামিন মিনারেল পেলেও কোন প্রাণ শক্তি পাওয়া যাবে না।
 এই বিষয়ে খাদ্য বিজ্ঞানীর বিচার বিশ্লেষণে দেখা যায় রান্না করলে খাদ্যের বৈদ্যুতিক প্রাণসত্তা (বষবপঃৎরপধষ ারঃধষরঃু) অথবা জীবনিশক্তি (ষরভব ভড়ৎপব) সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক প্রাণসত্তা র্ব্বিরজীত খাদ্যদ্রব্যের ভিটামিন মিনারেল এবং এমাইলো এসিড দেহ পরিচালনা করতে পারবে তবে উদ্দাম, উচ্ছল, নীরোগ স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। খাদ্যের এই বৈদ্যুতিক সজীব প্রাণসত্তা শরীর যন্ত্রের বৈদ্যুতিক শক্তি (হবৎাব পঁৎৎবহঃ) সঙ্গে প্রাণময় উদ্দীপনা (ারঃধষ রসঢ়ঁষংব) সম্পৃক্ত হবার এক ক্ষমতা। জীবন্ত খাদ্যের এই সঞ্জীবনী সুধাই জীবদেহের প্রাণসত্তাকে গতিশীল সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে। এই প্রাণ স্পন্দন পদার্থ খাদ্যে না থাকলে খাদ্যদ্রব্য প্রচুর পরিমানে অথবা বারে বারে গ্রহণ করেও মানুষ ৫০-৬০ বছরের মধ্যেই রোগগ্রস্থ অথবা অথর্ব হয়ে যাবে। মৃত খাবার যা শুধুমাত্র রান্না খাবার গ্রহণে অভ্যস্থদের শরীর সরেস ভারিক্কী দেখালেও ভেতরে গোটা শরীর ফাপা এবং তেজহীন হয়ে আয়ুষ্কাল কমে যাবে। আসলে খাদ্যের মধ্যে পুষ্টি ছাড়াও একটি প্রাণপূর্ণতার সজীবতার (ারঃধষরঃু) দিক আছে। কাচা খাবার বা জীবন্ত খাবার খেলেই কেবল খাদ্যের এই ারঃধষরঃু পাওয়া যাবে রান্না খাবারে কখনই পাওয়া যাবে না।
প্রতিটি জীব ও জন্তুর যৌবনের পরিনতি (সধঃঁৎরঃু) এবং তাদের নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল কত হবে তার একটা গাণিতিক সম্পর্ক আছে। শরীর তত্ত্ববিদরা হিসাব করে দেখেছেন প্রতিটি প্রাণী যে বয়সে সাবালকত্ব আসে তার অন্তত গড়ে ছয় গুন বেশী আয়ু পায় কিন্তু প্রাণী আট - দশগুন বেমী আয়ু লাভ করে। যেমন একটা ঘোড়া তিন বছর বয়সে সাবালক হয় কিন্তু বাঁচে ৩০ বছর। একটা গরু তিন বছর বয়সে পরিণতি লাভ করলেও বাচে ১৫/২০ বছর। সেই হিসাবে মানুষের সাবালকত্বের বয়স ২০ বছর হলে মানুষের আয়ুষ্কাল হওয়া উচিত একশত বিশ বছর কিন্তু মানুষ ৬০/৭০ বছর বয়সেই দেহত্যাগ করছে তাও আবার নীরোগ অবস্থায় নয়। বর্তমানে খুব কম মানুষই শেষ বয়সে সুস্থ্য থাকতে পারে। বেশীর ভাগ মানুষ ৮/১০ বছর রোগে ভূগে ভূগে ধুকে ধুকে বেচে থাকে। তুলনামূলকভাবে মানুষ আজ কম আয়ু বিশিষ্ট প্রাণী হয়ে গেছে শুধুমাত্র রান্না খাবারের উপর নির্ভরশীলতার কারণে।             
হজমের প্রশ্নে অনেকের ধারণা কাচা খাবার থেকে রান্না করা খাবার বেশী হজম হয় তার কারণ হিসেবে মনে করা হয় রান্না করলে যে কোন খাদ্য নরম ও সুপাচ্য হয়। এ ধারণার একেবারেই কোন ভিত্তি নেই। আসলে কাচা খাদ্য রান্না খাদ্যের চেয়ে অনেক কম সময়ে হজম হয়ে যায়। এটা একটা পরিক্ষিত তথ্য। সব ধরনের পাকা ফল অ-রাধা অবস্থায় আমরা খেয়ে থাকি এবং এগুলি ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে হজম হয়ে এর খাদ্যপ্রাণ, মিনারেল দেহ গ্রহণ করতে পারে অথচ এগুরি রান্না করে টক ঝাল চাটনি, আচার, মোরব্বা, জ্যাম,জেলিতে রূপান্তরিত করে খেলে হজম হতে অনেক সময় লাগবে এবং শরীরে অমেøর সৃষ্টি করবে।  শুধু ফল নয় কাচাব্যঞ্জন বা স্যালাদ আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি। মূলা, টমেটো, গাজর, বীট, শশা, পেয়াজ, রসুন, শাকালু, কাচা ছোলা, মটরশুটি, অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, মসুর, এসব কাচাই খেয়ে থাকি। এই সব কাচা খাদ্যগুলি হজম হতে যে সময় লাগবে তার তিন গুন বেশি সময় লাগবে যদি এগুলি রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া পাতা জাতীয় যেমন ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা কাচা স্যালাদে বহুলভাবে ব্যাবহৃত হয়। জাপানীরা কাচা মূলা আর রাশিয়ানরা বাধাকপি কাচাই খেয়ে থাকে। এটা পরিক্ষিত মূলা, বাধাকপি ও ফুলকপি রান্না করে খেলে গ্যাস হবেই। গোল আলু রান্নায় নিত্য ব্যবহার্য খাদ্য বস্তু। এই রান্না আলু খেলে মেদ বাড়ে, রক্তে সুগারের আধিক্য হয় বলে ডাক্তাররা আলু খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলে থাকেন। কিন্তু কাচা আলু খেয়ে অনকে উপকার পাওয়া যায়। প্রথমত গ্যাসের রোগীদের  জন্য এটি একটি অমোঘ প্রাকৃতিক ঔষধ এবং পুষ্টিকর পথ্য। কোন কিছু খেলেই গ্যাস হয়, এসিডিটি সমস্যা হয় তাদের জন্য কাচা আলু হতে পারে ধন্নান্তরী গ্যাস নিরাময়কারী একটি খাদ্য বস্তু। অসহ্য অম্বলে যারা ভুগছেন তারা তাদের প্রধান তিন আহারের সাথে এবং শেষে ২/৩ টি করে কাচা আলু খোসাসহ খায় তবে গ্যাসের প্রকোপ কমে যাবে এবং ২ সপ্তাহের মধ্যে আর অমেøর সৃষ্টি হবে না। খোসা সমেত কাচা আলু খাওয়ার অভ্যাস করলে শুধু অমøত্ব নয় ডায়াবেটিস রোগও ম্যাজিকের মত উধাও হয়ে যাবে। তবে  এক্ষেত্রে আহারের এক তৃতীয়াংশ কাচা বা অ-রান্না খাবার থাকতে হবে।
চাউল রান্না করে ভাত ও রান্না ব্যঞ্জন সহকারে খেলে শরীরে এসিডের সৃষ্টি হবে। একরাত ভেজানো আতপ চাল পাকা কলাসহ খেলে সম্পূর্ণ হজম হবে এবং অমেøর বদলে ক্ষারের সৃষ্টি হবে যা শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এখনও গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় অম্বল রোগীরা  ভোরে এক মুষ্টি চাল চিবিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে থাকে।  
টমেটো একটি টক জাতীয় বহুগুনে গুনান্বিত একটি সবজি। টমেটো রান্না করে যে ভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন এটা শরীরে অমøতা সৃষ্টি করবে। ভাত রুটি খাওয়ার সময় স্যালাদে টমেটো দিলে এর টক জাতীয় উপাদান শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হলেই এসিড সৃষ্টি করবে। শুধু টমেটো নয় যে কোন টক জাতীয় খাদ্য রান্না করলেই এসিড সৃষ্টি করবে। দেখা গেছে যাদের শরীরে এসিডের মাত্রা বেশী তাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে কারণ এসিডিটি রক্তের লাল কণিকা ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু সব ধরনের টকজাতীয় ফল অ-রান্না খেলে রক্তে এসিডের মাত্রা না বেড়ে বরং কমে যায় এবং ক্ষারধর্মিতা বেড়ে যায়।
অনেকের ধারণা রান্না করলে খাদ্য বস্তুর সব ভিটামিন একেবারে নষ্ট হয় না। রান্নার পরও কিছু ভিটামিন অক্ষত থাকে। রান্না করলে কোন খাদ্যদ্রব্যের প্রাণ থাকতে পারে না। ভিটামিন কিভাবে থাকবে ? 
সমস্ত ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন সি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং আগুনের তাপে/ সংস্পর্শে এই ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়, এটা সর্বজন স্বীকৃত। রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যার অভাব হলে দেহে রোগের প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে এবং রোগ হলে তা সারানো কঠিন হবে। যেহেতু ভিটামিন সি রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায় তাই এই ভিটামিন পেতে হলে কাঁচা শাক-পাতা খেতে হবে। শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং অসুস্থ্য শরীরকে সুস্থ্য করতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য কাচা খেতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শরীরে সি ভিটামিনের সঞ্চয় ব্যাংক গড়ে তোলা যায় না। যতবেশি সি ভিটামিন খাদ্য খাওয়া হোক না কেন শরীরে প্রয়োজনীয় সি ভিটামিন কাজে লাগিয়ে বাড়তি সি ভিটামিন সবটাই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাহলে পরদিন আবার শরীরে এই ভিটামিন কাচা খাদ্যের মাধ্যমে যোগান দিতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন কাচা টকফল ও স্যালাদ প্রচুর পরিমানে খেতে হবে। 
কাচা বা জীবন্ত খাবারে কি কি উপকার পাওয়া যায় ঃ
০১. জীবন্ত খাবার খুব সহজে কোন রকম অমø সৃষ্টি না করে হজম হয়ে যায় এবং বর্জ নিরবিঘেœ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। জীবন্ত খাবারে এনজাইম থাকে ভরপুর যা পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য গুলিকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করতে এবং হজম হতে সাহায্য করে।
০২. রান্না করা খাদ্য উপাদান গ্রহণ করার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ অথবা ক্লান্ত লাগে। পক্ষান্তরে কাচা বা জীবন্ত খাবার খেলে শরীরের উদ্দাম অনুভূত হবে।
০৩. কাচা খাবার খেলে মন পরিষ্কার মানষিক সর্তকতা বৃদ্ধি এবং চিন্তার যুক্তিমত সম্পন্ন প্রখরতা বাড়বে। কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ান সহজ হবে।
০৪. কাচা খাবারে বিদ্যমান ভিটামিন, মিনারেল,এনজাইম শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি ও তৃপ্তি আনয়ন করে যার কারণে খাবারের পরিমাণ কম হলেও অতৃপ্ত মনে হবে না।
০৫. জীবন্ত খাবার অভ্যাস করলে ৪ সপ্তাহের মধ্যেই শরীরের কটু গন্ধ উড়ে যাবে এবং ডিওড্রেন্ট, সুঘ্রাণ যুক্ত আতর, বা অন্যকোন স্প্রে ব্যবহার করার দরকার পরবে না।
০৬. জীবন্ত খাবার শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই চোখের জ্ব্যোতী বেড়ে যাবে এবং চোখ অনেক উজ্জ্বল দেখাবে।
০৭. কিছু দিনের মধ্যেই চামড়ার উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে এবং এক ধরণের দৃষ্টি নন্দন রক্তিম বর্ণের দূতি ছড়াতে থাকবে।
০৮. ৪ সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে উদ্যম কর্মশক্তি এবং তেজ বেড়ে যাবে। ঘুম হবে নিশ্চল স্থির গভীর এবং শান্তভাবে।
০৯. জীবন্ত খাবার গ্রহণ করার কিছু দিনের মধ্যেই শরীরের যত বিরূপ টক্সিন আছে তা পরিষ্কার হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।
১০. শরীরের সমস্ত স্নায়ুবিক ব্যবস্থা বিষমুক্ত হয়ে এর কার্যকারিতা বেড়ে যাবে ফলে মনে ভয় ও সংশয়, দুঃচিন্তা কমে যাবে।
১১. রান্না খাবার থেকে জীবন্ত খাবারে অভ্যস্ত হলে শরীরের অভ্যন্তরে এক বিষ্ময়কর অনুভূতি সৃষ্টি হবে যা পূর্বে কখনই অনুভূত হয় নাই।
বর্তমান সময়ে কাচা খাবার খেয়ে সুস্থ নিরোগ থেকে শতায়ু লাভকারী উদাহরন ভুরি ভুরি দেওয়া যায় বা আছে। পৃথিবীতে স্বাস্থ্যবান জাতীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাশ্মীরের উত্তর পশ্চিমে ষাট মাইল দূরে হুঞ্জা উপত্যকার হুঞ্জা জাতি। সভ্য যুগের প্রচলিত যত সব ধরনের রোগ এদের স্পর্শ করতে পারে না এদের সুদীর্ঘ সুস্থ জীবন মৃত্যু পর্যন্ত এরা সবল সুঠাম স্বচ্ছন্দ সাবলীল থাকে। এক ব্রিটিশ গবেষক মি. ম্যাক ক্যারিসন নিবীড় পর্যবেক্ষন করে যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তা হচ্ছে কাচা খাবার হচ্ছে তাদের খাবারের প্রধান খাদ্য উপাদান। তারা প্রধানত গম ও ডাল জাতীয় খাদ্য খায় এবং তার সাথে প্রচুর পরিমানে কাচা শাক সবজি ও ফলমুল খায়। হুঞ্জাদের শতায়ু থাকার রহস্য আহারে কাচা সবজি এবং ফলের প্রাচুর্য। 
বর্তমান আধুনিক যুগে কাচা খাবার খাওয়া অসাধ্য কাজ বলে বিবেচিত। যুগ যুগ ধরে রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ নয়। তবে রান্না খাবারের সাথে কাচা ব্যাঞ্জন (স্যালাদ) এবং প্রধান আহারের মাঝে কাচা ফল খাওয়া বাড়ান যেতে পারে। এইভাবে ধীরে ধীরে রান্না খাবারের এক তৃতীয়াংশ কাচা খাবার যেমন ফলমূল শাকসবজি এবং অঙ্কুরিত শশ্য যোগ করলেই সুস্থ্য থাকা যাবে। কাচা খাবার যতই বাড়বে ততই ফিরে পাওয়া যাবে আদিম স্বাস্থ্য, শক্তি, আয়ু এবং সুখ-শান্তি।

No comments:

Post a Comment